মোবাইল দিয়ে ভিডিও এডিটিং কোর্স

আজকের ডিজিটাল যুগে, আমরা ক্রমাগত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উৎপাদিত এবং ভাগ করা সামগ্রী দ্বারা পরিবেষ্টিত। বিষয়বস্তু তৈরির সবচেয়ে জনপ্রিয় ফর্মগুলির মধ্যে একটি হল ভিডিও সম্পাদনা, যেখানে ব্যক্তিদের তাদের সৃজনশীলতা এবং গল্প বলার দক্ষতা প্রকাশ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে, আপনার মোবাইল ডিভাইসে ভিডিও সম্পাদনা আগের চেয়ে আরও বেশি অ্যাক্সেসযোগ্য এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব হয়ে উঠেছে।

মোবাইল দিয়ে ভিডিও এডিটিং কোর্স

আপনি একজন সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালী হোন, একজন ছোট ব্যবসার মালিক হোন বা কেবল এমন কেউ যিনি মুহূর্তগুলি ক্যাপচার করতে এবং সেগুলি অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে উপভোগ করেন, আপনার মোবাইল ডিভাইসে ভিডিওগুলি কীভাবে সম্পাদনা করতে হয় তা শিখলে আপনার সামগ্রীর গুণমান উন্নত করতে পারে এবং এটিকে আলাদা করে তুলতে পারে। এই নিবন্ধে, আমরা বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং কৌশলগুলি অন্বেষণ করব যা আপনি আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে এবং আপনার হাতের তালু থেকে দৃশ্যত অত্যাশ্চর্য ভিডিও তৈরি করতে ব্যবহার করতে পারেন।

ভিডিও এডিটিং কি এবং ভিডিও এডিটিং কত প্রকার

ভিডিও এডিটিং হলো ভিডিও ক্লিপ, অডিও, ইমেজ, টেক্সট, এবং অন্যান্য উপাদানকে সাজিয়ে এবং পরিবর্তন করে একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরি করার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া, নতুন অংশ যোগ করা, রঙ ও আলোর সমন্বয় করা, এবং ভিডিওর গল্পকে আরও পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের টুল এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করে করা হয়, যেমন Adobe Premiere Pro, Final Cut Pro, DaVinci Resolve ইত্যাদি।

ভিডিও এডিটিং মূলত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:
  • প্রি-প্রোডাকশন: এডিটিং এর পরিকল্পনা, স্ক্রিপ্ট লেখা, শট নির্বাচন ইত্যাদি কাজ করা হয়।
  • প্রোডাকশন: ভিডিও ধারণ এবং সংরক্ষণ।
  • পোস্ট-প্রোডাকশন: শুট করা ফুটেজ নিয়ে এডিটিং এর মাধ্যমে ফাইনাল আউটপুট তৈরি করা হয়।
ভিডিও এডিটিং কত প্রকার:

ভিডিও এডিটিংকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
  • লিনিয়ার এডিটিং: এটি প্রাথমিক ধরনের ভিডিও এডিটিং পদ্ধতি যেখানে ভিডিও ফুটেজকে ধারাবাহিকভাবে একে একে এডিট করা হয়।
  • নন-লিনিয়ার এডিটিং: এই পদ্ধতিতে ভিডিও ক্লিপগুলো ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেগুলোকে যে কোনো ক্রমে এডিট করা যায়। এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং আধুনিক পদ্ধতি।
  • অনলাইন এডিটিং: ভিডিওর চূড়ান্ত সংস্করণ তৈরির জন্য উচ্চ রেজোলিউশনের ফুটেজ এডিট করা হয়।
  • অফলাইন এডিটিং: প্রাথমিকভাবে লো-রেজোলিউশনের ফুটেজ নিয়ে কাজ করা হয়, এবং পরে চূড়ান্ত ফুটেজের সাথে মিলিয়ে ফাইনাল আউটপুট তৈরি করা হয়।
  • কালার কারেকশন ও কালার গ্রেডিং: এই ধরনের এডিটিংয়ে ভিডিওর রঙ, কনট্রাস্ট, ও ব্রাইটনেস সমন্বয় করে আরও প্রফেশনাল লুক তৈরি করা হয়।
  • ভিজ্যুয়াল এফেক্টস (VFX): কম্পিউটার-জেনারেটেড গ্রাফিক্স এবং ইফেক্ট ব্যবহার করে ভিডিওতে বিশেষ দৃশ্য বা এফেক্ট যোগ করা হয়।
  • মাল্টি-ক্যাম এডিটিং: একাধিক ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল থেকে ধারণকৃত ফুটেজ একসঙ্গে এডিট করা হয়, যেমন লাইভ ইভেন্টের ভিডিও।
  • থ্রিডি ভিডিও এডিটিং: থ্রিডি ভিডিও ফুটেজ এডিট করা হয়, যা থ্রিডি এফেক্ট বা মডেল যোগ করতে ব্যবহৃত হয়।
এই সব পদ্ধতির মধ্যে নন-লিনিয়ার এডিটিং বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত।

মোবাইল দিয়ে ভিডিও এডিটিং কোর্স

মোবাইল দিয়ে ভিডিও এডিটিং শেখা এখন খুব সহজ, কারণ মোবাইলের জন্য অনেক শক্তিশালী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য ভিডিও এডিটিং অ্যাপ রয়েছে। আপনি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মোবাইল ভিডিও এডিটিং কোর্স করতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ এবং প্ল্যাটফর্মের তালিকা নিচে দেওয়া হলো, যেখানে আপনি কোর্স বা টিউটোরিয়াল পেতে পারেন:

মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ:
  • KineMaster: এটি একটি জনপ্রিয় মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ, যা খুব সহজেই পেশাদার মানের এডিটিং করতে সক্ষম।
  • কোর্স খুঁজুন: YouTube বা Udemy তে KineMaster নিয়ে অনেক কোর্স রয়েছে।
  • InShot: এটি একটি সহজে ব্যবহারযোগ্য মোবাইল এডিটিং অ্যাপ, যেখানে আপনি বেসিক কাট, ট্রিম, ফিল্টার এবং মিউজিক যোগ করতে পারবেন।
  • কোর্স খুঁজুন: YouTube-এ InShot ব্যবহার করে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে।
  • Adobe Premiere Rush: Adobe এর একটি মোবাইল ভার্সন, যা সহজে ভিডিও এডিট করতে দেয়।
  • কোর্স খুঁজুন: Udemy, Coursera বা LinkedIn Learning-এ Adobe Premiere Rush নিয়ে কোর্স আছে।
  • FilmoraGo: এটি Wondershare এর জনপ্রিয় ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার Filmora এর মোবাইল ভার্সন। সহজ ইন্টারফেস এবং অনেক ফিচার পাওয়া যায়।
  • কোর্স খুঁজুন: YouTube এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে FilmoraGo নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে।
  • CapCut: একটি ফ্রি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ যা TikTok এর জন্য জনপ্রিয়। এখানে ট্রানজিশন, ইফেক্ট, এবং টেক্সট যোগ করার সুবিধা রয়েছে।
  • কোর্স খুঁজুন: YouTube-এ CapCut ব্যবহার করে সহজ টিউটোরিয়াল।
অনলাইন কোর্স প্ল্যাটফর্ম:
  • YouTube: YouTube-এ অনেক ফ্রি টিউটোরিয়াল এবং কোর্স পাওয়া যায়, যেখানে মোবাইল দিয়ে কিভাবে ভিডিও এডিট করতে হয় তা শিখতে পারবেন। যেমন:
  • KineMaster, InShot, CapCut বা Premiere Rush নিয়ে অনেক ফ্রি টিউটোরিয়াল আছে।
  • Udemy: Udemy-তে মোবাইল ভিডিও এডিটিং নিয়ে অনেক পেইড কোর্স আছে, যেখানে আপনি ধাপে ধাপে গাইডলাইন পাবেন।
  • KineMaster, FilmoraGo, Premiere Rush এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপ নিয়ে কোর্স পাওয়া যায়।
  • Coursera: Coursera-তে বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের দেওয়া ভিডিও এডিটিং কোর্স রয়েছে, যেখানে আপনি পেশাদার মানের এডিটিং শিখতে পারবেন।
  • Skillshare: এই প্ল্যাটফর্মে মোবাইল দিয়ে ভিডিও এডিটিং শেখার অনেক ক্লাস পাওয়া যায়, যেগুলো নতুনদের জন্য খুবই কার্যকরী।
এইসব কোর্স ও টিউটোরিয়ালগুলো আপনাকে মোবাইল দিয়ে সহজেই ভিডিও এডিটিং শিখতে সাহায্য করবে।

ভিডিও এডিটিং এবং ক্রিয়েটিভিটি

ভিডিও এডিটিং এবং ক্রিয়েটিভিটি একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ভিডিও এডিটিং শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, বরং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার একটি সমন্বয়, যেখানে এডিটর গল্পকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেন এবং দর্শকদের অনুভূতিতে প্রভাব ফেলে।

ভিডিও এডিটিংয়ে ক্রিয়েটিভিটির গুরুত্ব:
  1. গল্প বলার দক্ষতা: ভিডিও এডিটিংয়ে সবচেয়ে বড় ক্রিয়েটিভ দিক হচ্ছে গল্প বলার দক্ষতা। এডিটর ভিডিওর অংশগুলিকে এমনভাবে সাজিয়ে তোলেন যাতে একটি সুসংগত গল্প বলা যায়। সঠিক টাইমিং, মিউজিকের ব্যবহার এবং দৃশ্যের বিন্যাস গল্পকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
  2. মিউজিক এবং সাউন্ড ইফেক্টস: সঠিক মিউজিক এবং সাউন্ড এফেক্ট ব্যবহার করে ভিডিওর মেজাজ পরিবর্তন করা যায়। ক্রিয়েটিভ মিউজিক চয়ন এবং শব্দের সাথে ভিডিওর সিঙ্ক করা একটি ভিডিওকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে।
  3. কালার গ্রেডিং ও কালার কারেকশন: ভিডিওর রঙের মাধ্যমে ভিডিওর পরিবেশ এবং আবেগকে প্রকাশ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি হরর সিনেমার জন্য ডার্ক টোন ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে একটি রোমান্টিক বা খুশির মুহূর্তে উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। রঙের সাথে কাজ করা এডিটরের সৃজনশীলতার গুরুত্বপূর্ণ দিক।
  4. ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস (VFX): ভিডিওতে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট যোগ করার মাধ্যমে কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়। এটি একটি উচ্চতর স্তরের সৃজনশীলতার প্রয়োজন, যেখানে এডিটর তার ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সায়েন্স ফিকশন বা সুপারহিরো মুভিতে VFX-এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  5. ট্রানজিশন এবং এফেক্টস: ট্রানজিশনগুলো যেমন কাট, ফেড, ওয়াইপ বা জুম এফেক্ট সৃজনশীলভাবে ব্যবহার করে দৃশ্যগুলির মধ্যে মসৃণ পরিবর্তন আনা যায়, যা দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখে।
  6. টাইমিং এবং পেসিং: সঠিক সময়ে একটি শট কাটা বা রাখা, এবং ভিডিওর গতি নিয়ন্ত্রণ করা ক্রিয়েটিভিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। উদাহরণস্বরূপ, একটি অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য দ্রুত কাট এবং তীব্র পেসিং প্রয়োজন হতে পারে, যেখানে একটি নাটকীয় দৃশ্যের জন্য ধীর পেস প্রয়োজন।
  7. গ্রাফিক্স এবং টেক্সটের সৃজনশীল ব্যবহার: ভিডিওতে টেক্সট এবং গ্রাফিক্স যোগ করার মাধ্যমে ভিডিওর বক্তব্যকে আরও পরিষ্কার এবং আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। এর সাথে বিভিন্ন এ্যানিমেশন বা টাইপোগ্রাফি ব্যবহার করে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলা যায়।

পরিশ্রম এবং ধৈর্যশীলতা

পরিশ্রম হলো কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধারাবাহিকভাবে কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মনিবেদন। এটি এমন একটি গুণ যা মানুষকে নিজের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সাহায্য করে এবং তাকে আরও দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

পরিশ্রমের কিছু বৈশিষ্ট্য:
  • নিয়মিত প্রচেষ্টা: ধারাবাহিক পরিশ্রম ছাড়া বড় কোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রতিদিন কিছু না কিছু করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব।
  • সমস্যা সমাধান: পরিশ্রমী মানুষ সমস্যাকে এড়িয়ে যায় না, বরং সমস্যার সমাধানের উপায় খোঁজে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা যায়।
  • আত্মনিবেদন: কোনো কাজে সফল হতে হলে সম্পূর্ণভাবে সেই কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিশ্রম ও সততা।
  • সাফল্য এবং পরিশ্রমের সম্পর্ক: পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য অসম্ভব। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা কঠোর পরিশ্রম করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছে।
ধৈর্যশীলতা:

ধৈর্যশীলতা হলো সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে স্থির এবং সহনশীল রাখা। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে লক্ষ্য অর্জনের পথে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজের বিশ্বাস এবং মনোবল অটুট রেখে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়া সফলতার জন্য অপরিহার্য।

ধৈর্যশীলতার কিছু বৈশিষ্ট্য:
  • অপেক্ষা করার ক্ষমতা: অনেক সময় সাফল্য বা ফলাফল পেতে সময় লাগে। ধৈর্যশীল ব্যক্তিরা এই সময়টা ভালোভাবে কাটাতে পারে এবং তারা জানে যে সঠিক সময়ে সাফল্য আসবেই।
  • নেতিবাচক পরিস্থিতিতে স্থির থাকা: জীবনের অনেক সময় নেতিবাচক পরিস্থিতি আসে। ধৈর্যশীল ব্যক্তি এমন পরিস্থিতিতে স্থির থেকে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।
  • অন্যদের জন্য সহনশীলতা: ধৈর্যশীল মানুষ অন্যদের মতামত, ব্যর্থতা, বা দুর্বলতাগুলো মেনে নিতে পারে এবং তাদের সাহায্য করে উন্নতি করতে।
  • সাফল্যের জন্য অপেক্ষা: ধৈর্যশীল ব্যক্তি জানে যে সাফল্য তৎক্ষণাৎ আসে না। তারা পরিশ্রম করে এবং অপেক্ষা করে সঠিক সময়ের জন্য।

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারগুলি ভিডিও ফুটেজ কেটে, যোগ করে, এবং সম্পাদনা করে পেশাদার মানের ভিডিও তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার বিভিন্ন ফিচার ও সুবিধা নিয়ে আসে, যেগুলি নতুন এবং পেশাদার উভয়ের জন্যই উপযোগী।

জনপ্রিয় ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার:

1. Adobe Premiere Pro

বৈশিষ্ট্য: পেশাদার মানের ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার, যেখানে মাল্টি-ক্যাম এডিটিং, কালার কারেকশন, VFX, এবং অডিও এডিটিং করার জন্য অনেক অ্যাডভান্স টুল রয়েছে।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: পেশাদার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা।
  • প্ল্যাটফর্ম: Windows, Mac
  • মূল্য: সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক (Creative Cloud এর অংশ)।
2. Final Cut Pro X

বৈশিষ্ট্য: Apple এর পেশাদার এডিটিং সফটওয়্যার, যা খুবই দ্রুত এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব। মাল্টি-ক্যামেরা এডিটিং, 360° ভিডিও সাপোর্ট, এবং অ্যাডভান্সড কালার গ্রেডিং রয়েছে।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: পেশাদার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা।
  • প্ল্যাটফর্ম: Mac
  • মূল্য: এককালীন মূল্য $299.99।
3. DaVinci Resolve

বৈশিষ্ট্য: এটি বিনামূল্যের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এডিটিং সফটওয়্যার, যা পেশাদার লেভেলের কালার গ্রেডিং এবং VFX এর জন্য বিখ্যাত। এটি সম্পূর্ণ ভিডিও এডিটিং স্যুট সরবরাহ করে।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: পেশাদার এবং নতুনদের জন্যও উপযুক্ত।
  • প্ল্যাটফর্ম: Windows, Mac, Linux
  • মূল্য: বিনামূল্যে (DaVinci Resolve Studio এর জন্য পেইড ভার্সন আছে)।
4. Adobe Premiere Rush

বৈশিষ্ট্য: সহজ ও দ্রুত ভিডিও এডিটিং এর জন্য Adobe এর একটি লাইটওয়েট সফটওয়্যার। মোবাইল এবং ডেস্কটপ উভয় প্ল্যাটফর্মে কাজ করা যায়।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: নতুন বা হালকা এডিটিং এর জন্য।
  • প্ল্যাটফর্ম: Windows, Mac, iOS, Android
  • মূল্য: সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক (Adobe Creative Cloud এর অংশ)।
5. iMovie

বৈশিষ্ট্য: Apple এর ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। বেসিক ভিডিও এডিটিং, ট্রানজিশন, টেমপ্লেট, এবং স্লো-মোশন ইফেক্টের মতো ফিচার আছে।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: নতুন এবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য।
  • প্ল্যাটফর্ম: Mac, iOS
  • মূল্য: বিনামূল্যে।
6. Filmora

বৈশিষ্ট্য: নতুনদের জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং সহজ ইন্টারফেস। এতে প্রি-সেট টেমপ্লেট, ইফেক্ট, এবং ট্রানজিশন পাওয়া যায়, যা দ্রুত এবং সহজ ভিডিও এডিটিং এর জন্য উপযোগী।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: নতুন এবং মাঝারি স্তরের ব্যবহারকারীদের জন্য।
  • প্ল্যাটফর্ম: Windows, Mac
  • মূল্য: বিনামূল্যে (ওয়াটারমার্ক সহ), প্রিমিয়াম ভার্সন সাবস্ক্রিপশন বা এককালীন মূল্য।
7. HitFilm Express

বৈশিষ্ট্য: এটি একটি বিনামূল্যের এবং শক্তিশালী ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার, যা VFX এবং 3D কম্পোজিশন সাপোর্ট করে। প্রচুর ফ্রি এডিটিং টুল রয়েছে।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: নতুন এবং মাঝারি স্তরের ব্যবহারকারীরা।
  • প্ল্যাটফর্ম: Windows, Mac
  • মূল্য: বিনামূল্যে (প্রিমিয়াম অ্যাড-অন প্যাকেজ পাওয়া যায়)।
8. KineMaster

বৈশিষ্ট্য: মোবাইল ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য একটি জনপ্রিয় অ্যাপ। এতে লেয়ার বেসড এডিটিং, ক্রোমা কি, ট্রানজিশন ইফেক্ট এবং অন্যান্য প্রোফেশনাল টুল আছে।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: মোবাইল এডিটর এবং নতুনদের জন্য।
  • প্ল্যাটফর্ম: Android, iOS
  • মূল্য: ফ্রি (ওয়াটারমার্ক সহ), প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন পাওয়া যায়।
9. CapCut

বৈশিষ্ট্য: TikTok এর জন্য জনপ্রিয় ফ্রি মোবাইল এডিটিং অ্যাপ। এতে সহজে ট্রানজিশন, ইফেক্ট, ফিল্টার, এবং মিউজিক যুক্ত করা যায়।
  • ব্যবহারকারীর ধরন: নতুন মোবাইল ব্যবহারকারী।
  • প্ল্যাটফর্ম: Android, iOS
  • মূল্য: বিনামূল্যে।

স্ক্রিপ্ট এবং স্পেশাল ইফেক্ট

স্ক্রিপ্ট এবং স্পেশাল ইফেক্ট (VFX) মুভি, নাটক, বা ভিডিওর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্ক্রিপ্ট একটি গল্পকে সংগঠিত করে এবং স্পেশাল ইফেক্ট সেটাকে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

স্ক্রিপ্ট:

স্ক্রিপ্ট হলো যেকোনো ভিডিও বা চলচ্চিত্রের মূল কাঠামো, যেখানে গল্প, চরিত্রের সংলাপ, অ্যাকশন এবং অন্যান্য বিবরণ লেখা থাকে। একটি ভালো স্ক্রিপ্ট ভিডিওর বেসিক ধারণা তৈরি করে এবং নির্মাতাকে একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন দেয়।

স্ক্রিপ্টের ভূমিকা:

গল্প বলা: স্ক্রিপ্ট গল্পের কেন্দ্রীয় ভাবনা বা প্লটকে নিয়ে কাজ করে। এটি গল্পের শুরু, মধ্য এবং শেষকে সঠিকভাবে গঠন করে।

সংলাপের নির্দেশনা: স্ক্রিপ্টে চরিত্রগুলির মধ্যে কথোপকথন এবং তাদের কার্যকলাপের সঠিক নির্দেশনা থাকে, যা অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা অনুসরণ করেন।

দৃশ্যের বর্ণনা: প্রতিটি দৃশ্যের সেটিং, চরিত্রের অবস্থান, এবং কার্যকলাপ স্ক্রিপ্টে উল্লেখ করা থাকে। এতে পরিচালক এবং অন্যান্য টিম মেম্বাররা পুরো কাজটিকে সংগঠিত করতে পারেন।

প্রযুক্তিগত নির্দেশনা: কোন দৃশ্যে কী ধরনের ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, আলো, সাউন্ড, বা স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করা হবে, সেটাও স্ক্রিপ্টে উল্লেখ থাকে।

স্ক্রিপ্টের ধরণ:
  • ফিল্ম স্ক্রিপ্ট: সিনেমা বা ফিল্মের জন্য স্ক্রিপ্ট, যা দীর্ঘ গল্প বা প্লটের উপর ভিত্তি করে।
  • ডকুমেন্টারি স্ক্রিপ্ট: বাস্তব ঘটনা বা তথ্যভিত্তিক কাহিনী বলার জন্য লেখা।
  • অ্যানিমেশন স্ক্রিপ্ট: অ্যানিমেটেড চরিত্রের জন্য বিশেষভাবে লেখা, যেখানে অডিও ভিজ্যুয়াল সংলাপ থাকে।
স্পেশাল ইফেক্ট (VFX):

স্পেশাল ইফেক্ট (Visual Effects বা VFX) হলো সিনেমা, টিভি শো, বা ভিডিওতে ব্যবহার করা কম্পিউটার-জেনারেটেড ইমেজ (CGI) এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত প্রভাব, যা বাস্তব জীবনে ধারণ করা সম্ভব নয় এমন দৃশ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

স্পেশাল ইফেক্টের ভূমিকা:

বাস্তবিক চিত্রের বাইরের কল্পনা: স্পেশাল ইফেক্টের মাধ্যমে অসম্ভব দৃশ্য বা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সায়েন্স ফিকশন মুভি বা সুপারহিরো সিনেমায় VFX ব্যবহার করা হয় উড়ন্ত গাড়ি, মহাকাশযান, বা অন্যান্য অসম্ভব কাজ বাস্তবায়নের জন্য।

বিস্ফোরণ এবং অ্যাকশন দৃশ্য: বড় বড় বিস্ফোরণ, দুর্ঘটনা, বা অন্য ধরণের ধ্বংসাত্মক দৃশ্য তৈরি করার জন্য VFX ব্যবহার করা হয়, যা আসলে বাস্তবে করা সম্ভব নয়।

চরিত্র বা প্রাণী তৈরি করা: VFX ব্যবহার করে বিভিন্ন অদ্ভুত প্রাণী, ড্রাগন, অথবা ফ্যান্টাসি জগতের চরিত্র তৈরি করা সম্ভব।

বায়ুমণ্ডল ও পরিবেশ: ফিল্মে বাস্তব জগতের বাইরে বিশেষ দৃশ্য বা ভিজ্যুয়াল তৈরি করতে VFX সাহায্য করে, যেমন কোনো ঐতিহাসিক বা কাল্পনিক জগত, মহাকাশ বা দূরবর্তী গ্রহ।

VFX এর বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি:

গ্রিন স্ক্রিন/ক্রোমা কি: অভিনেতাদের গ্রিন স্ক্রিনের সামনে অভিনয় করতে হয়, এবং পরে VFX ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ডে অন্যান্য দৃশ্য বা গ্রাফিক্স যোগ করা হয়।

3D মডেলিং: ত্রি-মাত্রিক মডেল তৈরি করে বাস্তবিক দেখতে এমন প্রাণী বা বস্তু তৈরি করা হয়।

মোশন ক্যাপচার: অভিনেতার চলাফেরা এবং মুখের অভিব্যক্তি রেকর্ড করা হয় এবং সেটি ডিজিটাল ক্যারেক্টারে স্থানান্তর করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, “The Avengers” বা “Avatar” সিনেমায় এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।

ক্লোনিং বা রিপ্লিকেশন: একটি চরিত্রকে একাধিকবার স্ক্রিনে দেখানোর জন্য একই চরিত্রের ক্লোন তৈরি করা হয়, যা বাস্তবিকভাবে করা কঠিন।

স্ক্রিপ্ট এবং স্পেশাল ইফেক্টের সম্পর্ক:

স্ক্রিপ্টে ইফেক্টের উল্লেখ: স্ক্রিপ্টে স্পেশাল ইফেক্টের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে পারে, যেমন "একটি বিস্ফোরণ ঘটে" বা "প্রাণীটি আক্রমণ করে"। এরপর VFX টিম সেই নির্দেশনা অনুসারে প্রযুক্তিগতভাবে ইফেক্ট তৈরি করে।

ইফেক্টের সময় স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী দৃশ্যের ধারাবাহিকতা: স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী VFX ব্যবহার করে দৃশ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়, যাতে পুরো গল্পে বাস্তবিকভাবে ইফেক্টগুলো সঠিকভাবে যোগ হয়।

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং শিখুন

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং শেখা হলো এক ধরনের সৃজনশীল এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা, যা আপনাকে ভিডিও প্রোডাকশন, মুভি এডিটিং, ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করতে পারে। এখানে পেশাদার ভিডিও এডিটিং শিখতে কীভাবে শুরু করবেন তার একটি গাইড দেওয়া হলো:

১. বেসিক কনসেপ্ট শেখা

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিংয়ের প্রথম ধাপ হলো ভিডিও এডিটিংয়ের মৌলিক ধারণাগুলি বোঝা। এই ধাপটি আপনাকে ভিডিও এডিটিংয়ের মূল বিষয়বস্তু এবং টার্মিনোলজি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে:
কাট, ট্রিম, স্প্লিট কীভাবে করা হয়।
  • টাইমলাইন এবং ট্র্যাক ব্যবহারের পদ্ধতি।
  • ট্রানজিশন এবং ইফেক্ট এর ব্যবহার।
  • অডিও সিঙ্কিং এবং অডিও এডিটিং।
  • কালার কারেকশন এবং কালার গ্রেডিং।
২. উপযুক্ত সফটওয়্যার বেছে নিন

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য বেশ কিছু সফটওয়্যার আছে। প্রথমে এক বা দুইটি সফটওয়্যার বেছে নিয়ে কাজ করা শুরু করুন। সাধারণত এই সফটওয়্যারগুলো পেশাদাররা ব্যবহার করেন:
  • Adobe Premiere Pro: এটি ফিল্ম, টিভি এবং ওয়েব ভিডিওর জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত সফটওয়্যার। একাধিক ক্যামেরা ফুটেজ, কালার গ্রেডিং, এবং VFX এর জন্য এটি প্রফেশনালদের প্রথম পছন্দ।
  • Final Cut Pro: এটি Apple ডিভাইসের জন্য একটি শক্তিশালী ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। এটি প্রফেশনাল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে জনপ্রিয়।
  • DaVinci Resolve: এটি পেশাদার মানের কালার গ্রেডিং এবং ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বিনামূল্যের সংস্করণ রয়েছে, যা শুরু করার জন্য ভালো।
  • Adobe After Effects: স্পেশাল ইফেক্ট, অ্যানিমেশন এবং VFX এর জন্য পরিপূর্ণ টুল।
৩. অনলাইন কোর্স বা ট্রেনিং গ্রহণ করুন
অনলাইন ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য অনেক কোর্স এবং রিসোর্স পাওয়া যায়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম:
  • Udemy: বিভিন্ন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং কোর্স অফার করে। Premiere Pro, Final Cut Pro এবং DaVinci Resolve শেখার কোর্স এখানে সহজলভ্য।
  • Coursera: বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রফেশনালদের দ্বারা প্রস্তুত করা ভিডিও এডিটিং কোর্স প্রদান করে।
  • Skillshare: নতুনদের জন্য বিভিন্ন ভিডিও এডিটিং ক্লাস পাওয়া যায়, যেখানে প্রজেক্ট-ভিত্তিক শেখার সুযোগ রয়েছে।
  • YouTube Tutorials: আপনি YouTube-এ অসংখ্য বিনামূল্যের টিউটোরিয়াল পেতে পারেন যা ভিডিও এডিটিং শেখার একটি সহজ উপায়।
৪. প্র্যাকটিস করুন
প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিংয়ে দক্ষতা অর্জন করার জন্য প্র্যাকটিসের কোনো বিকল্প নেই। আপনি নিচের কিছু উপায়ে প্র্যাকটিস করতে পারেন:
  • ছোট ভিডিও ক্লিপগুলো এডিট করা শুরু করুন।
  • নিজের তৈরি ভিডিও বা ফুটেজ ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করুন।
  • অনলাইন টেমপ্লেট বা ফ্রি ফুটেজ নিয়ে কাজ করে নতুন টেকনিক শিখুন।
  • প্রজেক্ট ভিত্তিক প্র্যাকটিস করতে পারেন। যেমন, আপনি ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানানো, প্রোডাক্ট প্রমোশনাল ভিডিও বানানো, বা ছোট্ট ডকুমেন্টারি এডিট করতে পারেন।
৫. অ্যাডভান্সড টেকনিক শিখুন
  • বেসিক শেখার পর, অ্যাডভান্সড টেকনিকগুলো শেখা শুরু করুন। এর মধ্যে থাকবে:
  • মাল্টি-ক্যাম এডিটিং: একাধিক ক্যামেরার ফুটেজ একসাথে সিঙ্ক করা।
  • মোশন গ্রাফিক্স এবং VFX: Adobe After Effects বা অন্যান্য সফটওয়্যার ব্যবহার করে।
  • কালার গ্রেডিং: DaVinci Resolve বা Premiere Pro এর মাধ্যমে পেশাদার মানের কালার গ্রেডিং শেখা।
  • অডিও এডিটিং: ভিডিওর সাথে অডিও সঠিকভাবে এডিট করা, নয়েজ রিমুভ করা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সিঙ্ক করা।
৬. নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করুন

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে একটি শক্তিশালী পোর্টফোলিও থাকা জরুরি। আপনার কাজের সেরা ভিডিওগুলো সংগ্রহ করে একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন। এটি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে বা কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হতে পারে।

আপনি নিজের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বানাতে পারেন বা YouTube বা Vimeo তে আপনার কাজ আপলোড করতে পারেন।

৭. ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করুন

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলো যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer ইত্যাদি ব্যবহার করে ছোট ছোট প্রজেক্টে কাজ শুরু করুন। এতে আপনি রিয়েল-ওয়ার্ল্ড প্রজেক্টে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন।

৮. ক্যামেরা এবং ভিডিও প্রোডাকশন জ্ঞান বৃদ্ধি করুন

ভালো ভিডিও এডিটর হওয়ার জন্য ক্যামেরা সেটিংস, শটিং টেকনিক এবং প্রোডাকশন প্রসেস সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকা ভালো। এতে আপনি ভিডিও ফাইলগুলোর মান এবং কন্টেন্ট সম্পর্কে আরও ভালো বোঝাপড়া তৈরি করতে পারবেন।

৯. নেটওয়ার্কিং এবং কমিউনিটি জয়েন করুন

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং কমিউনিটিতে জয়েন করুন এবং অন্যান্য এডিটরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন। ফেসবুক গ্রুপ, ফোরাম, বা কনফারেন্সে যোগদান করতে পারেন, যেখানে আপনি নতুন কিছু শিখতে এবং কাজের সুযোগ পেতে পারেন।

১০. ধৈর্য এবং ক্রিয়েটিভিটি ধরে রাখুন

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং একটি ক্রমাগত শেখার প্রক্রিয়া। নতুন নতুন টেকনিক এবং টুল শিখতে থাকুন, নিজের ক্রিয়েটিভ দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ান এবং কাজের প্রতি ধৈর্য ধরে রাখুন।

প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং শেখা হলো একটি ধীর এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সঠিক সফটওয়্যার নির্বাচন, অনলাইন কোর্স এবং যথেষ্ট প্র্যাকটিস আপনাকে একজন দক্ষ ভিডিও এডিটর হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ

ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ারটি বর্তমানে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ ডিজিটাল মিডিয়ার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিভিন্ন ফিল্ড যেমন সিনেমা, টিভি, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, এবং কর্পোরেট ভিডিও প্রোডাকশনের জন্য ভিডিও এডিটরের প্রয়োজন হচ্ছে। চলুন দেখি ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ার এবং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিস্তারিত:
 
১. ফিল্ম এবং টেলিভিশন

ফিল্ম এডিটিং: সিনেমা বা টেলিভিশন শো-এর জন্য ভিডিও এডিটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একজন ভিডিও এডিটরের কাজ হলো বিভিন্ন শট একসাথে এডিট করে গল্পের ধারা তৈরি করা।

ডকুমেন্টারি এডিটিং: ডকুমেন্টারিতে তথ্যভিত্তিক বা সত্য ঘটনা দেখানো হয়, যেখানে গল্প বলার পাশাপাশি ভিডিও এডিটরের দক্ষতা প্রয়োজন।

২. ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ক্রিয়েটর

ইউটিউবের জনপ্রিয়তার কারণে অনেক ইউটিউবার এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ভিডিও এডিটিং পরিষেবার জন্য পেশাদার এডিটরদের নিয়োগ করছেন। ছোট ও বড় ইউটিউব চ্যানেল, ইনফ্লুয়েন্সার, এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্য ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিতে ভিডিও এডিটরের চাহিদা রয়েছে।

৩. কর্পোরেট ভিডিও প্রোডাকশন

বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা তাদের প্রমোশনাল ভিডিও, মার্কেটিং কন্টেন্ট, ট্রেনিং ভিডিও এবং ইভেন্টের জন্য ভিডিও এডিটরের প্রয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য ভিডিও এডিটর নিয়োগ করে, যাদের মাধ্যমে ব্র্যান্ডের মেসেজটিকে ক্রিয়েটিভভাবে উপস্থাপন করা হয়।

৪. মিউজিক ভিডিও এডিটিং

মিউজিক ভিডিওর ক্ষেত্রে ভিজ্যুয়াল এবং সাউন্ড এডিটিংয়ের মিশ্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পী এবং ব্যান্ডদের জন্য প্রফেশনাল মিউজিক ভিডিও বানানোর জন্য দক্ষ এডিটরের প্রয়োজন।

৫. ফ্রিল্যান্সিং এবং এজেন্সি কাজ

অনেক ভিডিও এডিটর ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer এ কাজ করছেন। এখানে ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন।

এডিটিং এজেন্সিগুলোতে কাজ করার মাধ্যমে আপনি বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

৬. অ্যানিমেশন এবং VFX (Visual Effects)

অ্যানিমেশন এবং স্পেশাল ইফেক্টের ক্ষেত্রে ভিডিও এডিটররা ডিজিটাল অ্যানিমেশন তৈরি করে এবং বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল এফেক্ট যোগ করে সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা তৈরি করেন।

৭. শিক্ষামূলক এবং অনলাইন কোর্স প্রোডাকশন

ই-লার্নিং বা অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষামূলক কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য প্রফেশনাল ভিডিও এডিটরদের প্রয়োজন করে। এই কাজগুলোও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ:

১. ডিজিটাল কন্টেন্টের বৃদ্ধি

ভিডিও এডিটিংয়ের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল, কারণ ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের চাহিদা বাড়ছে। OTT প্ল্যাটফর্ম (Netflix, Amazon Prime) এবং ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম রিল, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্টের চাহিদা ভিডিও এডিটরের কাজকে আরও বহুমুখী করে তুলছে।

২. ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR)

VR এবং AR প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও এডিটরদের নতুন নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন হবে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরির জন্য দক্ষ এডিটরদের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

৩. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং অটোমেশনের ব্যবহার

AI এবং মেশিন লার্নিং ভিডিও এডিটিং প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করে তুলতে সাহায্য করছে। বিভিন্ন সফটওয়্যার এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কন্টেন্ট সাজাতে পারে, যা এডিটরদের সময় বাঁচায়। যদিও AI এডিটিং বাড়ছে, তবুও সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার জন্য প্রফেশনাল ভিডিও এডিটরদের প্রয়োজন থাকবে।

৪. স্পেশাল ইফেক্টের চাহিদা

সিনেমা এবং বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে স্পেশাল ইফেক্ট এবং ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের ব্যবহার বাড়ছে। VFX এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে জানলে ভিডিও এডিটিংয়ে ক্যারিয়ারের সুযোগ আরও বাড়বে।

৫. রিমোট কাজ এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা

বর্তমানে অনেক কাজই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এবং রিমোট হিসেবে করা হচ্ছে। ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

লেখকের শেষ কথা

মোবাইল দিয়ে ভিডিও এডিটিং শুরু করা হলো একটি অসাধারণ পদক্ষেপ, বিশেষ করে যারা প্রাথমিকভাবে এডিটিং শেখার আগ্রহী। সঠিক এডিটিং অ্যাপ বেছে নিয়ে ক্রমাগত প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আপনি মোবাইলেই দারুণ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। যদিও পেশাদার পর্যায়ের এডিটিংয়ের জন্য কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রয়োজন হতে পারে, মোবাইলের মাধ্যমে আপনি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে চমৎকারভাবে কাজ করতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে বড় প্রজেক্টেও অংশ নিতে পারবেন।

প্রথমে বেসিক টুলস এবং ফিচারগুলো শিখুন, ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে আপনার কাজের মান উন্নত করুন। মোবাইল এডিটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সৃজনশীলতা এবং সময় ব্যবস্থাপনা, যা আপনাকে সঠিকভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করবে। যেকোনো ডিভাইস দিয়ে ভিডিও এডিটিং শেখা, প্র্যাকটিস করা এবং নিজের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়, যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোমেন্টারি আইটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url