ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর জীবন সম্পর্কে জানুন

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস উদ্ভাবন, সমবেদনা এবং সামাজিক পরিবর্তনের সমার্থক নাম। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের ধারণায় বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন, দরিদ্র ব্যক্তিদের তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে এবং দারিদ্র্য থেকে নিজেদেরকে তুলে আনতে সাহায্য করার জন্য ছোট ঋণ প্রদান করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর জীবন সম্পর্কে জানুন

ক্ষুদ্রঋণে তার কাজের বাইরে, ড. ইউনুস তার বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে একটি আরও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব তৈরিতে তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেতৃত্ব ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে, ড. ইউনূস আরও ন্যায্য এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য যারা কাজ করছেন তাদের জন্য আশার আলো এবং অনুপ্রেরণা হয়ে চলেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর জীবন সম্পর্কে জানুন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ এবং সামাজিক উদ্যোক্তা, যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ড. ইউনূসের শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রামে, এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

ড. ইউনূস ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি দরিদ্র জনগণের জন্য কিছু করার সংকল্প করেন। এরপর তিনি ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করেন। এটি পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংকের রূপ নেয়, যা দরিদ্র মানুষের জন্য ছোট আকারের ঋণ প্রদান করে তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।

গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের, আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের সুযোগ পান। ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্য ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সামাজিক ব্যবসা ধারণারও প্রবক্তা, যেখানে ব্যবসার উদ্দেশ্য শুধু মুনাফা অর্জন নয় বরং সমাজের কল্যাণ করা।

ড. ইউনূসের জীবন ও কর্মের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মাননা অর্জন করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ড. ইউনুস এর বাড়ি কোথায়

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাটনা গ্রামে অবস্থিত। বাটনা গ্রামটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম, যেখানে তার পূর্বপুরুষরা দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছেন। ড. ইউনূসের পরিবারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান।

ড. ইউনূসের পৈতৃক বাড়িটি ঐতিহ্যবাহী এবং সাধারণ একটি গ্রামীণ বাড়ি ছিল। তার শৈশবের অনেক সময়ই তিনি এই গ্রামে কাটিয়েছেন। যদিও তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে কাটিয়েছেন, তবুও তার শিকড় এই গ্রামেই রয়ে গেছে।

ড. ইউনূসের এই পৈতৃক বাড়িটি তার শৈশব এবং প্রাথমিক জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, যেখানে তিনি একটি সাধারণ গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন এবং যা পরবর্তীতে তার জীবনের আদর্শ এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়ক হয়েছে।

ড. ইউনুস এর স্ত্রী

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্ত্রীর নাম আফরোজী ইউনূস। তিনি একজন শিক্ষিত এবং সামাজিকভাবে সচেতন নারী, যিনি তার স্বামীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগে সমর্থন এবং সহায়তা দিয়েছেন।

ড. ইউনূসের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল ভেরা ফোরাস (Vera Forostenko), তিনি একজন রুশ-আমেরিকান নারী এবং ইউনূসের সাথে তার পরিচয় ঘটে যখন ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি অধ্যয়ন করছিলেন। ১৯৭০ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে, কিছু ব্যক্তিগত কারণে তাদের বিবাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, এবং ১৯৭৯ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

পরবর্তীতে, ১৯৮০ সালে ড. ইউনূস আফরোজী ইউনূসকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান, মোনিকা ইউনূস, যিনি একজন প্রখ্যাত অপেরা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

আফরোজী ইউনূস একজন স্বনামধন্য নারী, যিনি তার স্বামীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিজেও সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তিনি ড. ইউনূসের কর্মজীবনের সহযাত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ড. ইউনুস এর সন্তান

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার স্ত্রী আফরোজী ইউনূসের একমাত্র সন্তান মোনিকা ইউনূস (Monica Yunus)। মোনিকা ইউনূস একজন প্রখ্যাত অপেরা সঙ্গীতশিল্পী এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত কণ্ঠশিল্পী।

মোনিকা ইউনূসের জীবনী:

জন্ম: মোনিকা ইউনূস ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা আফরোজী ইউনূস এবং বাবা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শিক্ষা ও সঙ্গীতজীবন: মোনিকা ইউনূস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জুলিয়ার্ড স্কুল (Juilliard School) থেকে সঙ্গীতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। জুলিয়ার্ড হলো পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা নিউ ইয়র্কে অবস্থিত।

কর্মজীবন: মোনিকা নিউ ইয়র্ক সিটি অপেরা (New York City Opera) এবং মেট্রোপলিটান অপেরা (Metropolitan Opera) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তিনি কণ্ঠসঙ্গীতের ক্ষেত্রে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং অনেকগুলো সম্মাননা পেয়েছেন।

সামাজিক উদ্যোগ: মোনিকা ইউনূস সামাজিক উদ্যোগেও সক্রিয়। তিনি Sing for Hope নামক একটি অলাভজনক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা সঙ্গীত ও শিল্পকলার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে কাজ করে। সংস্থাটি মূলত অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সঙ্গীত ও শিল্পের সুযোগ তৈরি করে দেয়।

মোনিকা ইউনূস তার বাবা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতোই মানবসেবায় বিশ্বাসী এবং তার সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন।

ড. ইউনুস মামলা

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে, যা বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এই মামলাগুলোর মূল বিষয়বস্তু প্রধানত তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত। নীচে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হওয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মামলার বিবরণ দেওয়া হলো:

১. শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ:

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের (গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান) আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করা হয়। অভিযোগটি ছিল যে, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিকদের সঠিকভাবে নিয়োগ, বেতন, এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হয়নি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ শ্রম আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এবং ড. ইউনূস সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।

২. কর সংক্রান্ত মামলা:

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কর সংক্রান্ত মামলাও হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার ড. ইউনূসের আয়কর প্রদানের বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করে। সরকার দাবি করে যে তিনি তার আয়কর প্রদান করেননি বা সঠিকভাবে জমা দেননি। এই মামলার মাধ্যমে তার আয়কর নথি এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়।

৩. গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কিত বিতর্ক:

২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম এবং ড. ইউনূসের ভূমিকা পর্যালোচনা করে। তদন্তে অভিযোগ করা হয় যে, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিলের কিছু অংশ অন্যত্র স্থানান্তর করেছেন। এই ঘটনার ভিত্তিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং তিনি ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

৪. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা মনে করেন যে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন এবং তিনি এই মামলাগুলোকে তার সামাজিক কাজ এবং ক্ষুদ্রঋণ উদ্যোগের প্রতি একটি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। মামলাগুলো এখনও বিচারাধীন এবং বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী এগিয়ে চলছে।

ড. ইউনুস কোন দল করেন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থক নন এবং তার কাজ মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেন্দ্রিক। ড. ইউনূস বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছেন, তবে তিনি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং উদ্যোগ:

ড. ইউনূসের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একমাত্র উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালে, যখন তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ড. ইউনূস "নাগরিক শক্তি" নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দেন। তার উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং সুশাসনের জন্য কাজ করা। তবে, তিনি পরে সেই উদ্যোগ থেকে সরে আসেন এবং দল গঠনের পরিকল্পনা স্থগিত করেন।

ড. ইউনূস সবসময়ই বলেছেন যে তার লক্ষ্য হলো সমাজের উন্নয়ন এবং দরিদ্রদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন করা। তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থেকে তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে অবদান রাখার ওপর জোর দেন।

যদিও তিনি নিজে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নন, তার কিছু কার্যক্রম এবং বক্তব্য মাঝে মাঝে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তবে, তিনি বরাবরই নিজেকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এবং দেশের উন্নয়নে নিবেদিত বলে দাবি করেছেন।

ড. ইউনুস কোন বিষয়ের জন্য নোবেল পুরস্কার পান

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে এই পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কারটি তাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের জন্য দেয়া হয়, যা দারিদ্র্য দূরীকরণে একটি কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পেছনের কারণ:

ড. ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবক্তা, যা সমাজের দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করে। ১৯৭৬ সালে তিনি চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে প্রথম ক্ষুদ্রঋণের ধারণা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের, ছোট ছোট ঋণ প্রদান করে তাদের আর্থিক উন্নয়নের পথ সুগম করা।

ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রোক্রেডিটের মূল ধারণা হলো, ব্যাংকগুলো সাধারণত দরিদ্র মানুষদের ঋণ দিতে চায় না কারণ তাদের কোনো জামানত থাকে না। ড. ইউনূস দেখিয়েছেন যে, দরিদ্র মানুষদের মধ্যে এমনকি ছোট ঋণও অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এই ঋণ দিয়ে তারা ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারে, যা তাদের আয়ের উৎস সৃষ্টি করে এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।

গ্রামীণ ব্যাংক:

ড. ইউনূসের এই ক্ষুদ্রঋণ ধারণা পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংকের রূপ নেয়, যা বাংলাদেশে এবং বিশ্বব্যাপী মডেল হিসেবে গৃহীত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত নারীদের ঋণ প্রদান করে, কারণ তারা দেখেছেন যে, নারীরা এই ঋণ ব্যবহার করে পরিবার এবং সমাজের উন্নয়নে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য এবং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নতি হওয়ায় ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংককে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

নোবেল কমিটির বিবৃতি:

নোবেল কমিটি তাদের ঘোষণায় বলেন, শান্তি টেকসই হয় না যদি দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে উন্নত না হয়। ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক সেই লক্ষ্যে অসাধারণ অবদান রেখেছেন, যা একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে সহায়ক হয়েছে।

ড. ইউনূসের কাজ শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণে নয়, বরং মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রেও একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার কাজ এবং ধারণা বিশ্বের অনেক দেশে অনুসরণ করা হয়েছে এবং এটি সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

লেখকের শেষ কথা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অনন্য মানবতাবাদী যিনি তাঁর জীবন এবং কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব। তার ক্ষুদ্রঋণ ধারণা শুধুমাত্র একটি আর্থিক মডেল নয়, বরং এটি সমাজের দরিদ্র অংশের জন্য একটি শক্তিশালী সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলন।

একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য তার অবদান এবং মানবতার প্রতি তার অঙ্গীকার বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে উন্নতি এনে দিয়েছেন, যা তাকে শুধু একজন সফল উদ্যোক্তা নয়, বরং একটি মহান সামাজিক পরিবর্তনের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ড. ইউনূসের জীবন এবং কর্ম একটি শক্তিশালী উদাহরণ যে একজন ব্যক্তি কিভাবে বৃহৎ পরিসরে পরিবর্তন আনতে পারে। তার আদর্শ এবং অর্জন আমাদের দেখায় যে মানবিকতার প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি এবং অবিচল বিশ্বাসের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তার কাজের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক উদ্যোগ এবং সহানুভূতির সাথে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব এবং এটি একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের জন্য অপরিহার্য।

ড. ইউনূসের গল্প আমাদের শেখায় যে বড় কিছু অর্জনের জন্য কখনওই অনেক সময় লাগবে না, বরং একটি দৃঢ় সংকল্প, কঠোর পরিশ্রম এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রয়োজন। তার জীবন ও কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, আমরা সকলেই একটি ভালো, ন্যায়সঙ্গত এবং শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গঠনে সহায়ক হতে পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোমেন্টারি আইটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url