মেজর বজলুল হুদাকে জবাই করা হয়েছিল

মেজর বজলুল হুদা বাংলাদেশের অনেকের কাছে পরিচিত একটি নাম, কারণ তার স্থিতিস্থাপকতা এবং সাহসিকতার অনুপ্রেরণামূলক গল্প জাতির হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। পাবনা জেলার একটি ছোট গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা মেজর হুদা ছোটবেলা থেকেই দেশ সেবার স্বপ্ন দেখতেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক প্রত্যাশা সহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, তিনি তার দেশকে সেবা করার এবং একটি পার্থক্য তৈরি করার জন্য তার আবেগকে অনুসরণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

মেজর বজলুল হুদাকে জবাই করা হয়েছিল

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর হওয়ার পথে তার যাত্রা সহজ ছিল না, কিন্তু মেজর হুদার অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা কখনোই ক্ষুণ্ণ হয়নি। কঠোর পরিশ্রম এবং অটল অঙ্গীকারের মাধ্যমে, তিনি বাধা অতিক্রম করেছেন এবং সম্মান ও বিশিষ্টতার সাথে তার দেশের সেবা করার স্বপ্ন অর্জন করেছেন। মেজর হুদার গল্পটি প্রতিকূলতার মুখে স্থিতিস্থাপকতা এবং সংকল্পের গুরুত্বের একটি শক্তিশালী অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে, অন্যদেরকে তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করে, তারা যে বাধাই আসুক না কেন।

মেজর বজলুল হুদা ছিলেন একজন বাংলাদেশী সামরিক কর্মকর্তা, যিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে গণ্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি সেই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী এবং কুখ্যাত "জেলে হত্যা" মামলার অন্যতম আসামি ছিল বলা হয়েছে। এই মামলায় মেজর হুদা সহ অন্যান্য আসামিরা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

মেজর বজলুল হুদা ২০০১ সালের নভেম্বরে ঢাকায় গ্রেফতার হন। তার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

২৮ শে জানুয়ারি ২০১০ ঢাকা কারাগার রাত সাড়ে ৯ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত টাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সব বিদ্যুৎ একসাথে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বললে ভুল হবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কারাগারে বিদ্যুৎ আসার পরের অবস্থা কেমন ছিল সেটা এখন বর্ণনা করা যাক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ওই দিন সবার অস্বস্তিকর অবস্থা কাজ করছিল কারণ সেই দিন ৫ জনের ফাঁসি মঞ্জুর করা হয়েছিল। আর যাদের সেই দিন হাসি মঞ্জুর করা হয়েছিল সেই পাঁচ জন মানুষ কারাগারের মধ্যে অনেক বিনয়ী এবং শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি ছিলেন।

রাত ১২ টা ১ মিনিটে কর্নেল ফারুক রহমান, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, মহিউদ্দিন আর টেরারি, শাহরিয়ার রশিদ খানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলে হত্যা করা হলেও লাশের সংখ্যা ছিল মোট পাঁচটি। ফাঁসি হওয়ার পর লাশবাহী গাড়িতে গ্রামে লাশ পাঠানো হয়। তবে একটি লাশের ক্ষেত্রে বিশেষ কড়া নজর রাখা হয়েছিল আর সেটি হলো চুয়াডাঙ্গার ছেলে মেজর বজলুল হুদার। মেজর বজলুর হুদার গ্রামের বাড়িতে সেদিন র‍্যাব পুলিশের অনেক গাড়ি প্রহরে ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল সেদিন চুয়াডাঙ্গাতে যুদ্ধ হতে চলেছে।

যুদ্ধের এই আলোচনা ছিল মূলত মেজর বজরুল হুদার লাশ যাতে কেউ দেখতে না পারে সেই জন্য। আর লাশ কেন দেখতে দেওয়া হবে না সেজন্য চুয়াডাঙ্গার মানুষ উচ্চ ভিড় করে পুলিশকে প্রশ্ন করে কেন ক্লাস দেখতে দেওয়া হবে না। এমন অবস্থায় গ্রামবাসীর সাথে পুলিশ না পেরে মেজর বজলুল হুদার লাশ দেখতে দেওয়া হয়। মেজর বজলুল হুদাকে যখন গোসল করা হয় তখন গ্রামবাসীর মানুষ দেখতে পায় তার গলায় ছুরির আঘাত তাকে ফাঁসি দেওয়া হয় নাই তার গলায় ছড়িয়ে দিয়ে কাটা হয়েছিল। চুয়াডাঙ্গার মানুষের কাছে মেজর বজলুল হুদা ছিলেন একজন সম্মানি ব্যক্তি।

এই জন্য মেজর বজলুর খোদাকে দেখতে আসার জন্য গ্রামবাসীর প্রচুর পরিমাণে জনগণ এসেছিল কিন্তু এতে পুলিশ হস্ত হস্তি করতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলার কথা মত 5 মিনিটের মধ্যে মেজর বজলুল হুদাকে দাফন করতে হবে কিন্তু গ্রামবাসীর জনগণের চাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিছু হতে বাধ্য হয়। প্রিয় মুখটাকে গোসল না করা পর্যন্ত কেউ দাফন করতে চায়নি। বাধ্য হয়ে প্রশাসন তাদেরকে আধাঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল দাফন করার জন্য।

মেজর বজলুল হুদার দাফনের কাপড় সরানো মাত্রই দেখতে পান তাকে ফাঁসি দেওয়া হয় নাই জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। জবাই করার পর মেজর বজরুল হুদার গলা সেলাই করে দেওয়া হয়। যখন মেজর বজলুল হুদাকে তার গ্রামের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তখনও তার গলা থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। মেজর বজলুর খোদাকে জবাই করার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হয়েছে এটি তাদের গ্রামবাসীদের মুখ থেকে শুনতে পাওয়া গেছে। গ্রামবাসী এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।

বাংলার বীর মেজর বজলুল হুদাকে কে এবং কারা জবাই করেছিল সেটি জানতে হলে আবারও রাত সাড়ে ৯ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত সেই দেড় ঘন্টা সময় ফিরে যেতে হবে। যে সময়টুকুতে কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং এর আশেপাশে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ওই রাতে কেন্দ্র কারাগারে যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা হরর মুভিকেও হার মানাবে। অনুসন্ধানে জানা যায় ২০১০ সালের ২৮ শে জানুয়ারি রাত ৯ টার পরপরই জেল গেটের দুইটি কালো গ্লাসের গাড়ি প্রবেশ করে।

ওই একটি গাড়িতে এস এফ এস এর সদস্যের সাথে শেখ হাসিনা এবং অপর একটি গাড়িতে জাহাঙ্গীর কোবির নানক, সম্রাট, তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুর্দান্ত ক্যাডার নাজমুল আলম ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই রাতে অপারেশনের পুরস্কার হিসেবে পরের বছর ২০১১ সালের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদকে বসানো হবে নাজমুলকে। এছাড়াও সম্রাট ও নানককে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব। এর বাইরে ও ওই গাড়িতে ভয়ংকর কুৎসিত দেখতে বড় গোফ ওয়ালা কয়েকজন মানুষ ছিল যার নাম কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান ওই রাতে মোট 2টি খাসির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। দুটি ফাঁসির মঞ্চ মোট দুজন দুজন করে ফাঁসি দেওয়া হয়। দূর থেকে কোন চার জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেটা বুঝা না গেলেও পঞ্চম জনকে ফাঁসি দেওয়া তো দূরের কথা মঞ্চে তোলা হয়নি। কিন্তু লাশ বের করার সময় জেলখানা থেকে মোট পাঁচটি লাশবাহী গাড়ি বের হয়েছিল। আরেকটি লাশ প্রশাসনিক ভবন থেকে লাশবাহী গাড়িতে তোলা হয়।

ওই রাতে শেখ হাসিনার সাথে জেলখানার ভেতরে প্রবেশ করা খুনিরা সোজা চলে যায় প্রশাসনিক ভবনে। আর শেখ হাসিনা পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাথে দাঁড়িয়ে থেকে চারজনের ফাঁসি নিজেই প্রত্যক্ষ করেন মনে করা হয় আসলে তাদের চারজনকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য শেখ হাসিনা নিজেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ফাঁসি কার্যকর হবার পরপরই শেখ হাসিনা চলে যান প্রশাসনিক ভবনে ভেতরে। সেখান থেকে রাত একটার কিছু আগে সেম একই গাড়িতে করে তারা প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন। মেজর বজলুল হুদার পরিবারকে জানানো হয়েছিল সেদিন রাতে কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি স্থানে মেজর বজলুর হুদাকে জবাই করা হয়েছিল এবং সেখানে শেখ হাসিনা নিজেই উপস্থিত ছিলেন।

বজলুল হুদাকে জবাই করার আগে তার বুকের ওপরে শেখ হাসিনা পা দিয়ে রেখেছিলেন। বজলুল হুদাকে জবাই করার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে জাহাঙ্গীর কোবির নানক, সম্রাট ও নাজমুল, তখন এই সম্রাটের গায়ে রক্তের দাগ ছিল দুই একজন সেটি দেখতে পায় তবে এইসব জিনিসগুলো গ্যারান্টি সহকারে বলা যাচ্ছে না তবে ওই সময় যেসব ব্যক্তি উপস্থিত ছিল সেই হিসাবে ধরা যায় তারা এই কাজটি করেছেন।

শেখ হাসিনা যেদিন মৃত্যুর খবর শুনতেন সেদিন স্বাভাবিক দিনের চেয়ে অনেক বেশি খেতেন। ২৯ মিন্টো রোডের বাসায় এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ময়না মিসেস মতিউর রহমান রেন্টু খাওয়া-দাওয়া বেশি করে এনেছো তো। লাশ দেখে এসেছি লাশ আজ আমি বেশি করে খাব। তারপর তিনি জিন্দেগি জিন্দেগি গাইতে গাইতে নাচতে লাগলেন। সত্যি সত্যিই তিনি শেখ হাসিনা অস্বাভাবিক রকমের বেশি খেলেন। এমনিতেই তিনি শেখ হাসিনা বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিহতদের লাশ দেখে স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি খেতেন কিন্তু আজ খেলেন অস্বাভাবিকের চাইতেও অনেক বেশি।

যাই হোক ১৫ই আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর বজরুল হুদাদেরকে আমরা সম্মান দিতে পারিনি। যে কারণেই আজ আবারো শেখ মুজিবুরের বেদাত্তা চেপে বসেছিল। বাংলাদেশের মানুষ ২০২৪ সালে এসে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ঠিক একইভাবে ১৯৭৫ সালে মেজর ডালিম কর্নেল, রশিদ কর্নেল, ফারুকার, মেজর বজলুল হুদার, এক অত্যাচারে বাকশালিন থেকে সাত কোটি বাঙালি কে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।

শেখ হাসিনার দূরশাসন দেখেছি কিন্তু শেখ মুজিবের টা আমাদের থেকে আড়াল করে রাখা হয়েছে বলেই এখনো তাকে সবার ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। তবে শেখ মুজিব ও তার আত্মীয়-স্বজন এবং তার দলের লোকজন বাদে অন্যদের ক্রীতদাস করে রাখা হয়েছিল।ভাত দে হারামজাদা নয়তো মানচিত্র খাব শেখ মুজিবের সময় কতটা অসচল ছিল তা বজলুল হুদার উইকিপিডিয়া কয়েকটি লাইন পড়লে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনার ভয়ে মেজর বজলুর হুদার জবাইয়ের কথা কাউকে বলতে পারেননি ২০২৪ সালে ৫ই আগস্ট যখন নতুন ভাবে দেশ স্বাধীন হয় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তখন বজলুল হুদার ছোট ভাই মুখ খুলতে সাহস পান এবং বিভিন্ন নিউজ এর মাধ্যমে মেজর বজলুল হুদার জবাইয়ের তথ্য প্রকাশ পায় এবং তারা এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোমেন্টারি আইটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url