ভারত থেকে ঢুকছে পানি, বন্যায় তলিয়ে ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চল
ভারত কয়েক সপ্তাহ ধরে মৌসুমী বৃষ্টির সম্মুখীন হচ্ছে, যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। উপচে পড়া নদীগুলো গ্রাম ও শহরকে প্লাবিত করেছে, হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে। সংহতি ও সদিচ্ছার প্রদর্শনীতে, ভারত ঘোষণা করেছে যে তারা বন্যার পানি বাংলাদেশের প্রতিবেশী ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলে প্রবাহিত করবে যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যায়।
ভারত থেকে ঢুকছে পানি, ভারত বাংলাদেশকে তার বাঁধ খুলে দেওয়ার বিষয়ে কোন কিছুই জানায়নি এবং তারা তাদের দেশের পানি বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে এর ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেমন ফেনী কুমিল্লা নোয়াখালী এছাড়াও ৮ টি অঞ্চলে অনেক ক্ষতি হয়। ভারত যদি তাদের বাঁধ খুলে দেওয়ার আগে বাংলাদেশকে একবার জানালে আজকে বাংলাদেশের এই অবস্থা হতো না। কিন্তু তারা বাংলাদেশকে না জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ অন্যান্য এলাকার বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। ওই এলাকায় ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পানির কারণে নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে। বিশেষ করে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৫৫ সেন্টিমিটার উপরে থাকায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
গোমতী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমিল্লায়ও বন্যা দেখা দিয়েছে। নোয়াখালী এলাকায় পানির পরিমাণও বাড়ছে। ওই এলাকার প্রায় দুই লাখ মানুষ বন্যায় আটকা পড়েছে। স্থানীয় সরকার এবং উদ্ধারকারী দলগুলি ত্রাণ সহায়তা প্রদান এবং মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে, তবে পরিস্থিতি এখনও চ্যালেঞ্জিং।
বন্যার কারণে অনেক লোককে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য করেছে এবং স্বাভাবিক জীবন কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারত থেকে আসা পানির কারণে ফেনী, কুমিল্লা, এবং নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ নিচে দেওয়া হল:
বরাক নদী ও ত্রিপুরা অঞ্চলের বৃষ্টি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে, বিশেষ করে ত্রিপুরা এবং আসাম রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারনে বরাক নদীর পানি বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে কুমিল্লা, ফেনী, এবং নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি করেছে।
চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরার পাহাড়ি ঢল যা ত্রিপুরা রাজ্যের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের মাধ্যমে পানি বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এই ঢল ফেনী, কুমিল্লা, ও নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত বাঁধ খুলে না দিলে বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হত না।
মেঘনা নদীর উপনদীগুলো, যা ভারতে উৎপন্ন হয়, ভারী বর্ষার কারণে প্লাবিত হয় যা এই অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলগুলো বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। ভারতের ড্যাম বা ব্যারেজ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়া হয়েছে, এই জন্য পানি বাংলাদেশের নদীগুলোতে প্রবাহিত হয়ে নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার রূপান্তরিত হয়েছে।
ভারতে বন্যার ফলে শুধু দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞই ঘটেনি বরং প্রতিবেশী অঞ্চলে, বিশেষ করে বাংলাদেশেও এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চল ভারতের উপচে পড়া নদী থেকে নিষ্কাশিত বন্যার পানির ক্ষয়ক্ষতি বহন করেছে।
ফেনী নদী, যা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপন্ন হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এবং বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে ফেনী নদী স্ফীত হয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা এবং নোয়াখালী সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান জলস্তর এই অঞ্চলে বাড়িঘর, ফসল এবং অবকাঠামো নিমজ্জিত করেছে, হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছে এবং সহায়তার মরিয়া প্রয়োজন রয়েছে।
বন্যার ফলে ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের অনেক গ্রাম দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যার ফলে সাহায্য সংস্থার জন্য অভাবীদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য এবং চিকিৎসা সরবরাহের অভাব ইতিমধ্যেই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
তাৎক্ষণিক মানবিক প্রভাবের পাশাপাশি, ভারতের বন্যায় বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। ফসল ও গবাদিপশু ধ্বংসের ফলে ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি খাতে মারাত্মক আঘাত হেনেছে। অনেক কৃষক তাদের জীবিকা হারিয়েছে, এবং বন্যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আগামী বছর ধরে অনুভূত হতে পারে।
বন্যার কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর মানুষ প্রতিকূলতার মধ্যেও অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে। স্থানীয় সম্প্রদায়গুলি একে অপরকে সমর্থন করার জন্য একত্রিত হয়েছে, তাদের যা কিছু আছে তা ভাগ করে নেওয়া এবং যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। এই বন্যাকবলিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের দ্বারা প্রদর্শিত সংহতি ও সহযোগিতার মনোভাব সঙ্কটের সময়ে বাংলাদেশি জনগণের শক্তি ও সংকল্পের প্রমাণ।
ভারতের বন্যা বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা এবং নোয়াখালীর মতো প্রতিবেশী অঞ্চলের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি করেছে। দুর্যোগের মানবিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক খরচ অপরিসীম, এবং বন্যার কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে এবং প্রয়োজনে ত্রাণ সরবরাহ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। এবং এই আটটি অঞ্চলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী এমনকি পুলিশ সহ সকলেই এই অঞ্চলের মানুষগুলোকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। এভাবেই বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভাই বোনকে রক্ষা করছেন ভারত থেকে বন্যার পানি আসার হাত থেকে।
মোমেন্টারি আইটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url