দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত

প্রতিটি মানুষের দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত তা আমাদের অনেকের জানা নেই। পানি খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে যা আমরা জানিনা এবং এই বিষয়ে আমরা সচেতন নই। আসুন দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত সঠিক তথ্যটি জেনে নিন।

দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত

আমরা সকলেই জানি পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া আমরা কেউ এক মুহূর্ত বাঁচতে পারবো না কারণ পানি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত সেই বিষয়ে আমরা এখন আলোচনা করব।

ভূমিকা

বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হয়। কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত পানি পান না করে থাকে তাহলে, তার জন্য বেঁচে থাকাটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় এবং শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মানুষের দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত তা অনেক বাক্তি জানে না। একটি ব্যক্তির দিনে ৪-৫ লিটার পানি খাওয়া উচিত।


তবে আপনি চাইলে এর থেকে বেশিও পানি পান করতে পারেন যারা অনেক পরিশ্রম করে এবং কৃষি কাজ করে তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। কারণ তাদের ঘামের মাধ্যমে শরীরের ভিতর থেকে পানি বের হয় এতে করে তাদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এজন্য তাদের উচিত ৭-৮ লিটার পানি পান করা।

১ লিটার সমান কত গ্লাস

এক লিটারে কত গ্লাস পানি ধারণ করতে পারে তা নির্ভর করে একটি গ্লাসের আকার বা ক্ষমতার ওপর। একটি গ্লাসের ধারণক্ষমতা ২৫০ মিলিমিটার হতে পারে বা তারও বেশি হতে পারে। তবে গ্লাসের ওপরে মিলিমিটার অনুমান করা যায়। যেমন

১ লিটার = ১০০০ মিলিমিটার

যদি একটি গ্লাসে ২৫০ মিলিমিটার পানি ধরে,

২৫০ মিলিমিটার প্রতি ৪ গ্লাস পানিতে ১ লিটার পানি ধারণ করতে সক্ষম।

সাধারণত চার গ্লাস পানিতে ১ লিটার পানি হয় তবে এটি গ্লাসের আকার ও পানি ধারণ ক্ষমতার উপরে সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে। কারণ গ্লাসের মিলিমিটার কতখানি সেটির উপর নির্ভর করে। অনেক ধরনের গ্লাস আছে যেগুলোতে ১ লিটার পানি ধারণ করতে সক্ষম। তবে আপনি যদি দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত সেটি নির্ধারণ করে ১ লিটার পানি খেতে যান তাহলে ১/২ কেজি গ্লাসে পানি খেতে পারেন ১/২ কেজি গ্লাসে দুইবার পানি খেলে তা ১ লিটার পানি খাওয়ার সমান হবে।

৩ লিটার সমান কত গ্লাস

এক লিটার পানি সাধারণত চার গ্লাস পানিতে হয়ে থাকে তাহলে ৩ লিটার পানি কত গ্লাসে নির্ণয় করা যাবে আসুন তা দেখে নেই।

১ লিটার = ৪ গ্লাস তাহলে প্রতি গ্লাসে ২৫০ মিলিমিটার পানি ধারণ করবে এবং ৩ লিটার পানিকে যদি ৩ দিয়ে ৪ কে গুন করা যায় তাহলে ১২ গ্লাস পানি হয়। অতএব, ৩ লিটার পানিতে যদি ১২ গ্লাস তাহলে গ্লাসের ধারণক্ষমতা ২৫০ মিলিমিটার হতে হবে।

আমরা জানতে পারলাম কত গ্লাসে ৩ লিটার পানি হয়। যাদের ক্লাসে পানি নির্ধারণ করে খেতে সমস্যা হয় তারা এক লিটার পানি বোতল কিনে গ্লাসে ঢেলে খেতে পারেন। তবে বোতলে পানি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটি কিডনিতে ক্ষতি করে। সেই জন্য গ্লাসে করে পানি খাওয়া উত্তম। এই থেকে আমরা জানতে পারলাম দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত।

বয়স অনুযায়ী পানি পান

বয়স অনুযায়ী পানি পান করা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ বয়স অনুযায়ী পানির প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন হয়ে থাকে। একজন মানুষের দিনে পানির চাহিদা নির্ভর করে তার বয়সের ওপর, ওজন ও শারীরিক, কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু কিছু নির্দেশিকা রয়েছে যা বয়স অনুসরণ করে পানি পান করা প্রয়োজন।

শিশুদের জন্য:
  • ১-৩ বছরের বাচ্চারা দিনে প্রায় ৪ গ্লাস যা ৯.৪০ মিলিমিটার পানি খেতে পারবে।
  • ৪-৮ বছরের বাচ্চারা দিনে প্রায় ৫ গ্লাস যা ১.২ লিটার পানি খেতে হবে।
  • কিশোর কিশোরীদের জন্য
৯-১৩ বছর:
  • মেয়েরা প্রতিদিন ১.৬ লিটার পানি খেতে হবে ৭ গ্লাস।
  • ছেলেদের প্রতিদিন ১.৯ লিটার পানি খেতে হবে ৮ গ্লাস।
১৪-১৮ বছর:
  • মেয়েরা প্রতিদিন ১.৯ লিটার পানি খেতে হবে ৮ গ্লাস।
  • ছেলেরা প্রতিদিন ২.৬ লিটার পানি খেতে হবে ১১ গ্লাস।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য:
  • মেয়েরা প্রতিদিন ২.১ লিটার পানি খেতে হবে ৯ গ্লাস।
  • ছেলেরা প্রতিদিন ৩ লিটার পানি খেতে হবে ১৩ গ্লাস।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য:
  • গর্ভবতী মহিলারা: প্রতিদিন ২.৩ লিটার পানি খেতে হবে ১০ গ্লাস
  • স্তন্যদানকারী মহিলারা: প্রতিদিন ৩.১ লিটার পানি খেতে হবে ১৩ গ্লাস।
বয়স্কদের জন্য:

বয়স্কদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পানির প্রয়োজনীয়তা কমে যেতে পারে। তবে শরীরের হাইড্রোজেন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যে নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে পানি পান করার জন্য। তেমন বয়স্কদের জন্য দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত তা একটি বয়স্ক মানুষ নির্ধারণ করতে পারে।

পানি পান করার জন্য যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে এটি একটি নির্দেশনা মাত্র। আপনার শরীরের ব্যক্তিগত পানির চাহিদা বিভিন্ন হতে পারে। যেমন সবার স্বাস্থ্যগত অবস্থা এক নয় তেমনি শরীরের পানির চাহিদা ও এক না কারো কম কারো বেশি।

রাতে কতটুকু পানি খাওয়া উচিত

রাতে কতটুকু পানি খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে একটি ব্যক্তির দৈনন্দিন পানের চাহিদার উপর এবং তার শরীরের পরিশ্রমের অন্যান্য প্রয়োজনের উপর। সারাদিন বাইরে কর্মস্থান থেকে এসে আপনার শরীরে কতটুকু পরিমাণ পানির ঘাটতি রয়েছে তা একান্তই আপনি বুঝতে পারবেন। তবে সাধারণত রাতে পানি পান করার জন্য আপনাকে কিছু সুপারিশ দেওয়া হল।

রাতে কতটুকু পানি খাওয়া উচিত

ঘুমানোর সময় বেশি পানি পান করে ঘুমাতে যাবেন না। কারণ আপনি যখন ঘুমানোর আগে বেশি পানি পান করবেন তখন আপনাকে বারবার বাথরুমে যেতে হতে পারে। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় তবে আপনি ঘুমানোর ১-২ ঘন্টা আগে পানি পান করতে পারেন এক গ্লাস প্রায় ২৫০ মিলিমিটার পানি পান করতে পারেন। যাতে আপনার শরীরের তৃষ্ণা এবং প্রয়োজন মিটাতে সহায়তা করে।

রাতে আপনি ১ লিটার থেকে ১.৫ লিটার পানি পান করতে পারেন তবে এটি অবশ্যই ঘুমানোর ১-২ ঘণ্টা আগে খেতে হবে। যদি পারেন সন্ধ্যার সময় ৭-৮টা বাজার মধ্যে পানি পান করে নিতে তাহলে এটি শরীরের জন্য ভালো। আর আপনার শরীর অনুযায়ী পানির পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে আপনি বেশি পানি পান করতে পারেন। তবে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানি পান করে ঘুমাতে পারেন।

দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত

দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে আপনার শরীরের উপর। যেমন বয়স লিঙ্গ শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ও আবহাওয়ার উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন ব্যক্তির শরীর অনুযায়ী দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত তা সেই ব্যক্তি নির্ধারণ করতে পারে। প্রতিটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ধারণ ক্ষমতা ভিন্ন সেই জন্য আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা আপনার নিজেকেই পূরণ করতে হবে। একটি মানুষের দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত তা আমাদের সকলেরই জানা।

৪-৫ লিটার পানি পান করা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত এর গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা আপনি নিজেই শারীরিক সংকেত তৈরি করতে পারেন। যেমন আপনার শরীরে তৃষ্ণা সংকেত পেলে এবং তৃষ্ণা অনুভব করলে পানি পান করেন। যখন এই তৃষ্ণা অনুভব করছেন তখন যেই পরিমাণ পানি পান করছেন সেই অনুযায়ী আপনি নিজেই সারাদিনে সেটি নির্ধারণ করতে পারবেন যে আপনার শরীরে কতটুকু পানির প্রয়োজন ।

কতক্ষণ পর পর পানি খাওয়া উচিত

পানি খাওয়ার সময় সূচি নির্ভর করে একটি ব্যক্তির দৈনন্দিন চাহিদার উপরে। প্রতিটি মানুষের লাইফ স্টাইল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে সবার শরীর এক নয়। তাই পানি খাওয়া সেই ব্যক্তির শারীরিক কার্যকলাপ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে থাকে। তবে আমরা আপনাকে সাধারণ কিছু পরামর্শ দিতে পারি।

প্রতিদিনের শুরুতে যেমন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমে আপনি ১-২ গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করবে এবং শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের করতে সহায়তা করে।প্রতিটি খাবারের আগে যেমন সকালের নাস্তা দুপুরের খাবার বা রাতের খাবার ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং শরীরের অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি কমাতে সাহায্য করবে। 

আর বিশেষ করে খাবারের সময় বেশি বেশি পানি পান করবেন না। কারণ খাবারের সময় যদি বেশি বেশি পানি পান করেন এতে আপনার হজমের সমস্যা হবে।আর খাবার খাওয়া শেষ হলে আপনি সাথে সাথে পানি পান করবেন না খাবার খাওয়ার ১-১.৫ ঘন্টা পর পানি পান করুন। আপনি যদি ব্যায়াম করে থাকেন তাহলে আপনাকে পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। এবং দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত তা ভালো করে জানতে হবে ব্যায়াম করার জন্য। 

ব্যায়ামে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পানি পান করুন এবং ব্যায়াম করার পাশাপাশি আপনার শরীরে পানির প্রয়োজন হলে পানি পান করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন পানির পরিমাণ যাতে বেশি না হয়ে যায়। পানির পরিমাণ বেশি হলে শরীরকে দুর্বলতা অনুভব করাবে। ব্যায়াম শেষ করে ৩০ মিনিট পর পানি পান করতে পারেন এতে আপনার শরীরের জন্য ভালো।

শীতকালে কতটুকু পানি খাওয়া উচিত

শীতকালে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় শরীরের পানির চাহিদা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কারণ আমরা ঠান্ডা আবহাওয়া অনুভব করি এবং আমাদের শরীরও কম ঘামে। তবে শীতকালেও পরিমাপ মতো পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং শরীরের সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয়। শীতকালে কতটুকু পানি খাওয়া উচিত তার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হল।

শীতকালে কতটুকু পানি খাওয়া উচিত
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে ১-২ গ্লাস পানি পান করা।
  • সারাদিনে বেশি পানি পান না করে কিছু সময় বিরতি নিয়ে পানি পান করুন।
  • ঠান্ডা আবহাওয়া গরম পানি পান করতে পারেন যেমন গরম চা স্যুপ খেতে পারেন।
  • শীতকালে তৃষ্ণা আমাদের কম অনুভব হয় তবে তৃষ্ণা কম অনুভব হলেও নিয়মিত পানি পান করতে হবে।
  • আপনার শরীরে পানির পরিমাণ কম থাকলে স্বাস্থ্যগত অবস্থার প্রভাব ফেলে। যেমন কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে এইজন্য নিয়ম অনুযায়ী পানি পান করুন।
অবশেষে বলা যায় শীতকালে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবারে বেশি পানি পান করতে না পারলে একটু একটু করে পানি পান করুন এবং আপনার শরীরকে সচেতন রাখুন। আপনার শরীরের হাইড্রেশন কার্যক্রম ঠিক রাখতে সহায়তা করতে পারে এবং শীতের সময় শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

শেষ মন্তব্য

এই নির্দেশিকা গুলি সাধারণ পরামর্শ মাত্র আপনার শরীরে নির্দিষ্ট কতটুকু পানি চাহিদা প্রয়োজন তা একান্তই আপনি বুঝতে পারবেন। এবং পানি পানের নিয়ম নীতি বা পরিমান বজায় রাখা স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে, এই আলোচনা অনুযায়ী আপনি নিয়মগুলি মেনে চলুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোমেন্টারি আইটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url