রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি
রাসেল ভাইপার, বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলির মধ্যে একটি। বিশ্বের অন্যান্য বিষাক্ত সাপের মধ্যে এই সাপটির স্থান ''৫ম তম''। এর শক্তিশালী বিষ এবং দ্রুত আঘাতের সাথে, রাসেল ভাইপার একটি ভয়ঙ্কর শিকারী। এই রাসেল ভাইপার সাপটি, ডাবোয়া রুসেলি নামেও পরিচিত, রাসেল ভাইপার বিষাক্ত সাপের প্রজাতি যা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে বিস্তত আবাসস্থলে পাওয়া যায়।
রাসেল ভাইপার নামটি হারপিটোলজিস্ট প্যাট্রিক রাসেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে, এই সাপটি তার আকর্ষণীয় চেহারা এবং শক্তিশালী বিষের জন্য পরিচিত। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই রাসেল ভাইপার সাপের বিষয়ে।
রাসেল ভাইপার কি
এই রাসেল ভাইপার সাপটি এই বছরে অনেক ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই সাপটির নাম ইংরেজিতে রাসেল ভাইবার ও বাংলায় নাম চন্দ্রবোড়া। এই সাপ তার বিপদজনক বিষ এবং তার চেহারার জন্য পরিচিত, এই সাপটির মাথা দেখতে ত্রিভুজাকার আকৃতির এবং সরু শরীর ও গারো বাদামি বা ধূসুর আসে স্বতন্ত্র প্যাটার্ন রয়েছে। এটি একটি বিষধর সাপ, এর বিষ হেমোটক্সিক, যার অর্থ এটি তার শিকারের রক্ত এবং রক্তনালী কে প্রভাবিত করে।
রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস
রাসেলের ভাইপার, ডাবোয়া রুসেলি নামেও পরিচিত, দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া একটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ। শক্তিশালী বিষ এবং মারাত্মক কামড়ের জন্য বিখ্যাত, এই সাপটি দীর্ঘকাল ধরে ভয়ের বিষয়। এই বিপজ্জনক সরীসৃপের ইতিহাস এবং আচরণ সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছুই অজানা। এখন আমরা আলোচনা করবো রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস সম্পর্কে।
এই সাপের নামকরণ করা হয়েছিল স্কটিশ প্রাণীবিদ প্যাট্রিক রাসেল (Patrick Russell) এর নামে, যিনি ১৮ শতকে ভারতীয় সর্পের উপর গবেষণা করেছিলেন। তারপর থেকে, এটি গবেষক এর মাধ্যমে সাপটির প্রচলন রয়েছে। এমনকি এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে একটি সুপরিচিত এবং স্বীকৃত সাপ হয়ে উঠেছে।
প্যাট্রিক রাসেল প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি এই রাসেল ভাইপারকে বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণনা করেন।তিনি ১৭৮১ সালে ''কোরোমন্ডেল উপকূলে সংগৃহীত, ভারতীয় সর্পদের একটি হিসাব বইয়ে'' এই সাপের কথা উল্লেখ করেন। রাসেল ভাইপারের নাম "Daboia" এটি ফার্সি শব্দ "daboya" থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো বিপদ বা দুঃখজনক।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা
রাসেল ভাইপারের কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এটি দ্রুত চিকিৎসা না করালে প্রাণঘাতী হতে পারে। এই বিপজ্জনক সাপের সাথে সম্ভাব্য মুখোমুখি হওয়া এড়াতে রাসেল ভাইপারদের আচরণ এবং আবাসস্থল বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসেল ভাইপার কামড়ালে কী করণীয় তা নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
এই সাপটি কামড়ালে ভয় এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। যা আপনার শরীরে বিষ ছড়িয়ে যেতে ত্বরান্বিত করবে, এই জন্য আপনাকে শান্ত থাকতে হবে যাতে আপনার শরীরে বিষ ছড়াতে না পারে। কামড়ানো অঙ্গ কম নাড়াচড়া করতে হবে এবং অঙ্গটি নিচু স্থানে রাখুন, যাতে বিষ দ্রুত আপনার শরীরে ছড়িয়ে যেতে না পারে।
যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে, হাসপাতলে দ্রুত পৌঁছানো বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টি-ভেনম গ্রহণ করতে হবে। রাসেল ভাইপার এর কামড়ের জন্য এন্টি-ভেনম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকারী চিকিৎসা।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে যে কাজগুলো করা উচিত নয়
রাসেল ভাইপার একটি বিষাক্ত সাপ এই সাপ কামড়ানোর ফলে অনেক কৃষক প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছেন। এই রাসেল ভাইপার কামরানোর ফলে যে কাজগুলো করা উচিত নয় সেই বিষয়গুলি আপনাদের সামনে আলোচনা করবো যাতে করে আপনাদের এই তথ্যগুলো উপকারে আসে নিচে তথ্যগুলো উল্লেখ করা হলো:
কামড়ের স্থানে চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না। কারন এটি বিষের ছড়িয়ে পড়া কমাতে সাহায্য করে না, বরঞ্চ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কামড়ের স্থানে কাটাকাটি করবেন না, এটি আরো ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়। কামড়ের স্থানে ভুল করেও বরফ লাগাবেন না, কারণ রক্তে বিষ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে। এবং ক্ষতস্থানের আশেপাশের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অ্যালকোহল বা কফি পান করবেন না, এটি আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিবে এবং বিষ পুরো শরীলে ছড়িয়ে পড়বে।
এই রাসেল ভাইপার সাপটি কামড়ালে উপরের এই তথ্যগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ আপনার শরীরে এই কার্যক্রম যদি করে থাকেন তাহলে আপনার মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই আপনাকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে ইসলাম অনুসারে কি করণীয়
ইসলামিক নির্দেশিকা অনুসারে, রাসেলের ভাইপার কামড়ালে শান্ত থাকা এবং অবিলম্বে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আর ক্ষতটি পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয় এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা বা দোয়া পাঠ করা, তাহলে এই সময়ে আল্লাহ তা'আলা আপনাকে শক্তির প্রদান করতে পারে। রাসেল ভাইপার কামড়ালে ইসলাম অনুসারে কি করণীয় জেনে নিন।
আপনাকে রাসেল ভাইপার কামড়ালে প্রথমেই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে, গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধ করার জন্য দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত প্রয়োজন। নিজেকে সুরক্ষা রাখার জন্য বেশি বেশি দোয়া পাঠ করতে হবে, কারণ ইসলামে নিজেকে ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। সূরা আল-ফালাক এবং সূরা নাস তেলাওয়াত করুন।
আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে হবে কারণ মনে রাখবেন শেষ পর্যন্ত সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হয়। সেই জন্য আপনাকে আল্লাহর জ্ঞানের উপর আস্থা রাখতে হবে। এবং এই কঠিন সময়ে তিনি আপনাকে নিরাপদ এবং সুরক্ষা দেবেন বলে বিশ্বাস রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিষাক্ত পোকামাকড় ও যাবতীয় হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিরাপত্তার দু'আ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিং শাররী মা খলাক্বা।
অর্থ: আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহর সকল পূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায়, তার সৃষ্ট সকল প্রাণীর অনিষ্টতা থেকে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
রাসেল ভাইপার সাপটি অনেক বিষাক্ত সেজন্য আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। এই সাপটি অনেক হিংস্র এবং সাপের কার্যকলাপের জন্য পরিচিত। এলাকায় খালি পায়ে হাঁটা এড়িয়ে চলুন, প্রতিরক্ষা মূলক পোশাক পড়ুন। লম্বা ঘাস বা পাথরে জায়গায় আশেপাশে সতর্ক থাকুন সেখানে সাপ লুকিয়ে থাকতে পারে।
আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করুন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা পারে আমাদেরকে এই সাপের হাত থেকে রক্ষা করতে। তিনি সকল প্রাণীর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আর চিকিৎসা গ্রহণ করার পাশাপাশি আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখুন।
মোমেন্টারি আইটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url