রাসেলস ভাইপার সাপ আতঙ্কে বাংলাদেশ
রাসেলস ভাইপার বিশ্বের সবচেয়ে একটি ভয়ংকর এবং কুখ্যাত প্রজাতির মধ্যে একটি সাপ। এর মারাত্মক এবং আক্রমণ প্রকৃতির জন্য পরিচিত, এই আকর্ষণীয় হিংস্র সরীসৃপটি সাপ প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া, ভারত থেকে চীন পর্যন্ত পাওয়া যায়। রাসেল ভাইপার দেখতে ত্রিভুজাকার-আকৃতির মাথা এবং পুরো ভারি শরীরের সাথে রাসেলস ভাইপারের সহজেই চেনা যায়। এবং দীর্ঘকাল ধরে রাসেলস ভাইপার সাপটি গবেষকদের মুগ্ধ করেছে।
এই ভয়ঙ্কর খ্যাতি সত্ত্বেও রাসেলস ভাইপার আসলে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সহ একটি আকর্ষণীয় প্রাণী। এর জটিল শিকারের কৌশল থেকে শুরু করে তাপ এবং গতি অনুধাবন করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এই সাপটির বিভিন্ন ধরনের অভিযোজন রয়েছে যা একে বিভিন্ন পরিবেশে থাকতে সক্ষম। রাসেল ভাইপারের বিভিন্ন তথ্য ও সন্ধান পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যোগ দিন, এবং এই অসাধারণ সাপটির রহস্য এবং বিস্ময় অন্বেষণ করুন।
রাসেলস ভাইপার বলা হয় কেন
এই সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলা হয়। তার কারণ রাসেলস ভাইপার নামটি এসেছে চিকিৎসক ও প্রাণীবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নাম অনুসারে, যিনি ১৮ শতাব্দীতে ভারতের বিষধর সাপ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। এই প্যাট্রিক রাসেলকে আধুনিক সাপ ও উভচর প্রাণীদের অধ্যায়ন করতেন এবং অন্যতম প্রবর্তক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন বিষাক্ত সাপের বর্ণনা দিয়েছেন এবং তার কাজের মাধ্যমে রাসেলস ভাইপার প্রথম ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
এই সাপটির বৈজ্ঞানিক নাম Daboia Russelii, এই নামটি রাসেলের প্রতি সম্মান জানিয়ে রাখা হয়েছে। তার গবেষণা এবং সাপটির বিষক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কারণে সাপটির নামকরণে তার নাম ব্যবহৃত হয়েছে। এই ব্যক্তিটির মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি এই সাপের আকর্ষণীয় চেহারা, শক্তিশালী বিষ এবং আক্রমনাত্মক আচরণ ও অন্যতম কুখ্যাত সাপ হিসেবে এর স্থানকে মজবুত করেছে।
রাসেলস ভাইপার চেনার উপায়
রাসেলস ভাইপার সাপটির শারীরিক আকার সাধারণত ৩-৪ ফুট লম্বা হয়ে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় হয়ে থাকে। রাসেল ভাইপার শরীরের রং সাধারণত হলুদ এবং বাদামী। এই সাপটির শরীরে বাদামি ও কালো রংয়ের বিন্দু বা চক্রাকার দাগ রয়েছে। যা একে চিহ্নিত করা সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ। সাপটির শরিলের প্রতিটি দাগের চারপাশে হালকা রঙের আভা থাকে।
রাসেল ভাইবার সাপের মাথার আকৃতি ত্রিকোণাকৃতি, এবং শরীরের তুলনায় চওড়া হয়। এমনকি মাথার উপরের দিকে একটি তীর চিহ্নের মতো বা V এর মত দাগ থাকে। রাসেলস ভাইপারের লেজে ঝুনঝুনির মত রয়েছে, যা শব্দ করে সাবধানতার সংকেত দিয়ে থাকে। এটি দেখেও আপনি সহজেই চিনে যেতে পারবেন।
রাসেলস ভাইপার সাপ কোন দেশের
রাসেলস ভাইপার ভারত ও পাকিস্তান সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলির মধ্যে একটি। রাসেলস ভাইপার এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সাপ কামড়ানো মানে একটি জীবন-হুমকির পরিস্থিতি হতে পারে, কারণ এর বিষে শক্তিশালী টক্সিন রয়েছে। যা গুরুতর উপসর্গের কারণ হতে পারে এবং অবিলম্বে চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও হতে পারে।
রাসেল ভাইপার সাপটি কোন নির্দিষ্ট দেশের না। এই সাপটি প্রধানত দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি দেখা যায়। নিচে কিছু প্রধান দেশগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো
ক্রমিক নং | দেশের নাম |
---|---|
১ | ভারত |
২ | বাংলাদেশ |
৩ | নেপাল |
৪ | শ্রীলঙ্কা |
৫ | থাইল্যান্ড |
৬ | মিয়ানমার (বার্মা) |
৭ | পাকিস্তান |
৮ | কম্বোডিয়া |
৯ | চীন |
বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা আগে কম ছিল, বর্তমানে ২০২৪ সালে এর পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
রাসেলস ভাইপার সাপ কোথায় থাকে
রাসেলস ভাইপার সাপটি বিভিন্ন ধরনের আবাসস্থলে থাকতে পছন্দ করে, তবে সাধারণত এরা শুষ্ক ও উষ্ণ এলাকায় বাস করে থাকে। রাসেলস ভাইপার গাছপালা এবং জলের উৎস সহ আবাসস্থল পছন্দ করে, যেমন তৃণভূমি, কৃষিক্ষেত। কৃষি জমি ও খোলা জমিতে রাসেলস ভাইপার সাপ প্রায়ই দেখা যায়। এমনকি ঘন ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে এদের দেখা মেলে।
ধানক্ষেত এবং অন্যান্য ফসলের জমি এদের প্রিয় আবাসস্থল। এই সাপটি মানুষের বসতবাড়ির কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করতেও পরিচিত, যা মানুষের এবং সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। কারণ এই সাপটির খাবার হচ্ছে ইঁদুর, টিকটিকি ও বন্যপ্রাণী শিকার করার জন্য মানুষের বসতবাড়ির কাছাকাছি থাকে। পাতাঝরা ও শুষ্ক বনাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপ বাস করতে পছন্দ করে।
রাসেলস ভাইপার সাপ আতঙ্কে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ-রাসেলস ভাইপারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে বাস করছেন। এটি একটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ এবং এর কামড়ের ফলে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। বাংলাদেশের ২৭ টি গ্রামের মানুষ এই সাপের আতঙ্কে রয়েছে। এই আতঙ্কে থাকার কিছু কারণ আছে সেগুলো আলোচনা করা হলো।
রাসেলস ভাইপার সাপ আতঙ্কের কারন হচ্ছে এই সাপটির বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দ্রুত কাজ করে যা মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। রাসেল ভাইপার বসতবাড়ি ও কৃষি জমি এবং গ্রামের আশেপাশে বেশি দেখা যাচ্ছে। এই জন্য বাংলাদেশের মানুষ বেশি আতঙ্কে রয়েছে। বাংলাদেশে এই সাপটি ব্যাপকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে।
রাসেলস ভাইপার কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ কামরানোর পর শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, যেমন রক্তক্ষরণ, কিডনির সমস্যা, এবং অন্যান্য শারীরিক অক্ষমতা সৃষ্টি করে থাকে। এজন্য আপনাকে দ্রুত এবং কার্যকরী চিকিৎসা প্রদানের জন্য বিশেষ ধরনের এন্টি-ভেনম নিতে হবে। এটি শুধুমাত্র মেডিকেল বা বিভিন্ন হাসপাতালে পাওয়া যায়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
রাসেলস ভাইপার সাপ দেখে আতঙ্ক না হয়ে সচেতন থাকুন এবং অন্যকে সচেতন করুন। আর আমাদের এই তথ্যগুলো শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন। আপনার একটি শেয়ারের মাধ্যমে অনেক মানুষ সচেতন হতে পারবে এবং এই সাপটির বিষয়ে অনেক তথ্য জানতে পারবে।
বিশেষ করে গ্রামের মানুষেরা যারা কৃষি কাজ করেন, তারা এই রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে। আমাদের সকলের উচিত কৃষকদের কাছে এই তথ্যগুলো পৌঁছে দেওয়া, যাতে করে আমাদের কৃষক ভাইরা সচেতনভাবে কৃষি কাজ করতে পারে।
মোমেন্টারি আইটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url